কবিতা-ছোট্ট হতাশা
কবিতা-ছোট্ট হতাশা
রাত নিজুম চোখে নেই ঘুম বাহিরে সমীর ধীর
অভাবী মাতার কপোল বহিয়া নামিছে কালের নীর
আসে প্রতি সন মাহে রমাদান আসে সাহরীর ভোর
মোরগ পোলাও না জুটে কপালে কাটে না রীতির ঘোর।
এভাবেই আসে ইফতার বেলা আবার সে যায় চলে
মুখে চেনে নারে জিলেপি মিঠাই ক্ষুধার মানিক জ্বলে
ছলছল আঁখি কি দেবে জবাব অনাহারে বাছা তার
রাঁধিয়া ছালুন শাক লতা পাতা দিন যে হয়েছে পার।
বাছা কয় ডেকে মা’রে শোন শোন ভোরে কি যে দিবি খেতে
আমার পরাণে চাহিছে যে গোস্ বুক ভরে ঘ্রাণ পেতে
দিবি কি রে মাগো রাঁধিয়া ছালুন সাহরীর এই রাতে
খুব মজা হবে তোর রাঁধা গোস্ সাথে ডাল সাদা ভাতে।
কবিতা-ছোট্ট হতাশা
আহারে খোকন কত ছোটো চাওয়া চাইলি রে মোর কাছে
আমি যে অধম এ চাওয়া টুকু মেটাবার সাধ আছে?
ইয়া রহমান ইফতার হলো তোমার করুনা দিয়ে
জল ছাড়া আর জুটে নাই কিছু দুই দিন এই নিয়ে।
আবার খোকন ঘুমের ভেতরে ফিসফিস করে বলে
মজা হবে মাগো খুব হবে মজা সাহরি এমন হলে
এক গ্রাসে নেবো ভাত আর গোস্ শীতল জলের কাপ
নামাজের পানে যাবো ছুটে মাগো চাহিতে রুহের মাফ।
রাত যায় বেড়ে আঁখির বারিষে ভেজায় বালিশ কাঁথা
ঘাত-প্রতিঘাতে সারাটি বছর এমনিতে আছে গাঁথা
মুদি দোকানীর কড়া কড়া বাণী বলেছে দেবে না বাকি
আবার বলে সে দেনা করে যদি দেই তারে আমি ফাঁকি।
অনেক অনেক কথার বদলে দিয়েছে কিছুটা বাকি
দেবার সময় ফের মোরে কহে ফাঁকি দেবে মাগো নাকি?
ফের হলো ভোর সাহরির লাগি জেগে গেলো কঁচি
প্রাণ শুধালো মায়েরে হাসিমাখা মুখে গোস্ত্রে নাই কি ঘ্রাণ?
মলিন মুখটি বলে না কো কথা ক্ষণিক কালের লাগি
বুকের পাঁজর যায় বুঝি ভেঙে মরণের তরে জাগি
হাত তুলে মাতা বলে রহমান খেলিছো এ কোন খেলা
জীবনের আয়ু আর কত আছে অসহায় কাটে বেলা।
জড়াইয়া ধরে খোকনের গালে কপালে আদর করে
বলে বাছা শোন আগামীর রাতে বিরানি হবে এ ঘরে
কুঁঠিঘর হতে রেখে দেবো ধরে বাঁকের মোরগ খানা
এবার সাহরি নে না খেয়ে সোনা না রাখিস ধরে টানা।
ইফতারে পাবি সবুজ মরিচ গরম ভাতের মাড়
খেলে যাবে চলে মাঘের হাওয়ায় ভীতকর সব জাড়
খেজুরের মাঝে পোকা থাকে খোকা তাইতো লাগে না ভালো
শরবতে রঙ কেন জানি ভুয়ো রঙরসে তার কালো।
এমনি করিয়া মাতা ছেলে মিলে সাহরি নিলো যে সেরে
দিন- মান যায় ইফতার হয় সাহরি আসে যে ফিরে
মাঝরাত হলো কুঁঠিপরে গেলে মাতা হাত রাখে মাথে
কিসের কারণে মরে পড়ে আছে ঘন আঁধারের সাথে?
হায় দয়াময় কেমন বিচার অভাবী মাতার সনে
কচিপ্রাণ জুড়ে দিলে তুমি ব্যথা কাঁদি আমি মনে মনে
জুটলো না তোর পোলাও খাওয়া বাপজান দোয়া করি
আখেরের পরে খানাপিনা তোর ওপারে রবে যে ভরি।
নুন ঝাল দিয়ে জলজমা ভাতে সাথে মাখে আঁখি জল
সেহরি সারিলো মায়ে বেটা মিলে রহিলো বাঁকিতে ফল
ফজরের ডাকে বাহির হইলো আঁধারের পথ ধরি
কোন সে সাপের কামড়ে বাছাটি এইবার গেলো মরি।
শোরগোল হলো মুখে মুখে কহে ছেলেটি আদবে বেশ
অথচ দেখুন বিধাতার লীলা কেটে যাবে বুঝি রেশ
ইয়া রহমান দিও গো নাজাত রমাদান মাস এটা
তুমি বলিয়াছো গোরা’জাব মাফ ভালো মনে করো যেটা।
একটু পরেই জানাজার শেষে দাফন করিতে হবে
মায়াবী হাসির ঝলক সমেত যেনো বাদে কথা কবে
ডেকে কান মাতা ওহে প্রভু মোর নাও মোরে তুলে নাও
খোকাকে আমার বুকের চাদরে আদরে জড়াতে দাও।
পারি নাই দিতে সেহরি দিন চাহিদার কোনো খানা
যেনো পাই বাছা নয়নের মণি তোমা’ কাছে তব পানা’
যারা আছো আজ খোকার দাফনে তাদের কহিতে চাই
খোকা গেলো চলে আল্লাহু ছাড়া মোর যে কেহই নাই।
ওগো মুসলিম তোমাদের বলি স্মরিয়া নবীজি বাণী
প্রতিবেশী তরে দিতে হবে হক চলিতে কোরান মানি
ভুখা ফাঁকা র’লো কোন প্রতিবেশী অসুখে ক’জন বাঁচে
কাদের লইয়া দল বাধিয়াছো মিছে কথা কও পাছে?
ফিরিলো সবাই মাটি দিয়ে খোকা কবরের সেই দেশে
পথিকের মতো শুরু হলো যেনো ভিখারি মায়ের বেশে
হাঁক ছেড়ে ডাকে উঠে আয় বাবা খেজুর পোলাও দেবো
আহারের দামে কলিজা বেচিয়া কিছু গোস্ চাল নেবো।
বেহুস হইয়া ধুলায় লুটাই ফের উঠে ফের কাঁদে
সবগুণ ছিলো মোর খোকা মাঝে তাঁকেও নিয়েছো বাদে
পৃথিবীর আলো যেনো নিভে গেলো পানাহার রলো পড়ে
মায়ের আকাশে ঘুড়ি যায় উড়ে সুতো যেনো ছিঁড়ে ঝড়ে।
কবিতা-ছোট্ট হতাশা
লেখকঃ এম আল মাহমুদ হাসান